শুভ যে দিনগত রাতে শবে বরাত হয়- সিলেটজুড়ে সেই দিনের পরিবেশ এবং রেশই থাকে অন্যরকম। সিলেটের বেশিরভাগ মুসল্লিরাই টুপি আর পাঞ্জাবি পরে, সুগন্ধি মেখে জুহরের নামাজের পর থেকেই বের হয়ে যান হারানো পিতা-মাতা বা নিকটাত্মীদের করব জিয়ারত করতে। কবরস্থানে গিয়ে সন্তানরা মরহুম মা-বাবা ও পরিবার-পরিজনদের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্না করে করে মুনাজাত করেন। এছাড়াও প্রত্যেক মসজিদেই প্রত্যেক ওয়াক্তে জামাআতের পর অনুষ্ঠিত হয় মিলাদ, দোয়া আর শিরনি বিতরণ।
রাস্তায় দেখা যায় সব শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে যাচ্ছেন দূর-দূরান্তের কবরস্থানে নিকটাত্মীদের করব জিয়ারত করতে। সর্বত্রই বিরাজ করে এক ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ।
কিন্তু সিলেটের বিগত শবে বরাতসমূহের এসব চিরায়ত দৃশ্য পাল্টে দিয়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস। করোনা কেড়ে নিয়েছে সিলেটে শবে বরাতের রেশ। নামাজি নিয়ন্ত্রণবিষয়ক আদেশ এবং জনসমাগম তৈরি না করার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এবারের শবে বরাতে সিলেটে নেই মসজিদে মসজিদে মুসল্লির সমাগম। কবরস্থানগুলোতে নেই বুকফাটা কান্নার মুনাজাত আর আহাজারি। সিলেটে চারদিকে নতুন আর অচেনা এক শবে বরাতের পরিবেশ বিরাজ করছে আজ।
‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবি ‘লাইলাতুল বরাত’ মানে সৌভাগ্যের রাত। মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকবেন। অনেকে রোজা রাখেন, দান-খয়রাত করেন। অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন মুসলমানরা।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ কামনা করে পবিত্র শবে বরাতের রাতে বিশেষ দোয়া করতে কবরস্থান ও মাজারে জনসমাগম না করার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। এর বাইরে নয় সিলেটবাসীও। শবে বরাতের লোক সমাগম ঠেকাতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত বন্ধ রয়েছে। এর কার্যকারিতায় বন্ধ রয়েছে মূল ফটক। মূল ফটক ও মাজারে ঢুকার বাকি ২ রাস্তায় রয়েছে পুলিশ মোতায়েন। যাতে কেউ জিয়ারত করতে মাজারের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
একইভাবে আগামীকাল শুক্রবারও (১০ এপ্রিল) মাজার জিয়ারতের গেইট বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন মোতাওয়াল্লি ফতেউল্লাহ আল আমান। ফলে এইবার শবেবরাতে হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারত করা যাবে না।
এর আগে গতকাল বুধবার (৮ এপ্রিল) ইফার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব দৃশ্যমান। বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে মহিমান্বিত এ রজনীতে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করে ইবাদত বন্দেগির সময় ব্যক্তিগত দোয়া ও প্রার্থনা ছাড়াও করোনাভাইরাসের মহামারির আক্রমণ থেকে দেশবাসী, প্রিয় মাতৃভূমি, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসীকে সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখতে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করার জন্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই অবস্থায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে ঘরে থেকেই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা এবং ইবাদাত করার অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেটের বিজ্ঞ আলেমসমাজ।